হলিউডের স্বর্ণযুগের চটকদার চিত্রতারকা হলেও তার কিছু স্বাতন্ত্র্য ছিল। তিনি শুধু সুন্দরী অভিনেত্রীই ছিলেন না, তার আবিষ্কারের ফলে আধুনিক মোবাইল ফোন তৈরি সম্ভব হয়েছে।
নায়িকা হিসেবে হেডউইগের প্রথম ছবি মুক্তি পায় চেকোস্লোভাকিয়া থেকে, ১৯৩২ সালে। ওই সময় জার্মানিতে হিটলার রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে আরম্ভ করেছেন। আতঙ্কিত ইউরোপের ইহুদিরা নিরাপত্তার খোঁজে নিজ দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। বাঁচার তাগিদে হেডউইগের মা গেরট্র–ড খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করলেন। মেয়েকেও ইহুদি ধর্ম পরিত্যাগ করতে উৎসাহ দিলেন। এর কয়েক বছরের মধ্যে হেডউইগ আমেরিকায় অভিবাস গ্রহণ করে ‘হেডি লামার’ হয়ে হলিউডে অভিনয় শুরু করলেন। সেখানে তার প্রথম ছবি মুক্তি পায় ১৯৩৮ সালে। আমেরিকায় এসে হেডি নিরাপদ হলেন ঠিকই, কিন্তু ইউরোপে তখন ইহুদি নিধনযজ্ঞ চলছে। তিনি ঠিক করলেন অভিনয়ের পাশাপাশি এ যুদ্ধে আমেরিকার সামরিক বাহিনীকে সাহায্য করবেন। জার্মানির আর এক অভিবাসী সঙ্গীতজ্ঞ জর্জ অ্যান্থিয়েলের সঙ্গে হেডি আলোচনা করলেন নৌযুদ্ধে বিশেষ ফ্রিকোয়েন্সির সংকেত প্রচার করে শত্র“পক্ষের রেডিওযুক্ত টর্পেডোকে বিভ্রান্ত করার সম্ভাবনা নিয়ে। সেই সঙ্গে একইভাবে নিজেদের টর্পেডোও সুরক্ষিত রাখা যাবে। এ আলোচনা থেকেই অ্যান্থিয়েলের সঙ্গে হেডি গড়ে তুললেন নাৎসি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্যে ‘সিক্রেট কমিউনিকেশন সিস্টেম’। প্রচার ও গ্রহণের সময়ে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বিভিন্ন এবং নিয়মবহির্ভূতভাবে পালটিয়ে তারা প্রায় অলঙ্ঘনীয় এক সংকেত-সারি সৃষ্টি করলেন। পিয়ানোর ৮৮টি চাবি সম্পূর্ণ অনিয়মিতভাবে ব্যবহার করে সঙ্গীতের ভিত্তিতে লামার ও অ্যান্থিয়েল আবিষ্কার করলেন ‘ফ্রিকোয়েন্সি হপিং’- যা পরে মোবাইল ফোনের মুখ্য বিল্ডিং ব্লক হয়ে দাঁড়াল।
১৯৪২ সালে লামার এবং অ্যান্থিয়েল এই নতুন বার্তা পদ্ধতির জন্য প্যাটেন্ট পেলেন। কিন্তু মার্কিন নৌবাহিনী প্রযুক্তিটি ব্যবহার করতে রাজি হল না। হয়তো এক সুন্দরী চিত্রতারকা ও এক সঙ্গীতজ্ঞের তৈরি পদ্ধতিতে তাদের খুব একটা আস্থা হয়নি। ১৯৬২ সালে কিউবান মিসাইল সংকটের সময় পদ্ধতিটি সাফল্যের সঙ্গে প্রথম ব্যবহার করা হয়।
একমাত্র জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে হেডি লামার তার যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য সম্মান পান। ১৯৯৭ সালে ইলেক্ট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশন আধুনিক বার্তা আদান-প্রদান ব্যবস্থায় লামারের অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে ‘পাওনিয়ার’ ও ‘বাল্বি ন্যাস স্পিরিট অফ অ্যাচিভমেন্ট’ ব্রোঞ্জ পুরস্কার দেয়। ২০০০ সালে মৃত্যুর পর তাকে ‘ন্যাশনাল ইনভেন্টার্স হল অফ ফেম’-এ সদস্যপদ দেয়া হয়।
গুণী এই অভিনেত্রী এবং বিজ্ঞানী ২০০০ সালের ১৯ জানুয়ারি ৮৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে সমাধিস্থ করা হয়েছে ভিয়েনায়।