প্রায় ২০০ বছর আগে ভারতীয় এক মুসলিম লন্ডনে খুলেছিলেন প্রথম রেস্তোরাঁ। দ্য হিন্দোস্তানি কফি হাউস। এত বছর পর নিলামে বিক্রি হয়েছে সেখানকার হাতে লেখা একটি মেন্যু। তাতে রয়েছে জিভে জল আনা মসলাদার ২৫টি ভারতীয় খাবারের সম্ভার। লন্ডনে বিরল বইয়ের মেলা বসেছিল ২৪ থেকে ২৬ মার্চ।
সেখানে তালিকাটি বিক্রি করে জার্নডিস অ্যান্ডিকুয়্যারিয়্যান বুকস। নিলামে মেন্যুটির দাম উঠেছে ৮ হাজার ৫০০ পাউন্ড, যা ১১ হাজার ইউএস ডলার, আর বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টাকা। শেখ দিন মাহমেদ নামে এক ভারতীয় ১৮১০ সালে চালু করেন ওই রেস্তোরাঁ। লিখেছিলেন আত্মজীবনীও।
তিনি প্রথম ভারতীয়, যার লেখা ইংরেজিতে ছাপা হয়েছিল। জন্ম পাটনার এক অভিজাত পরিবারে, ১৯৫৯ সালে। বাবার মৃত্যুর পর মাত্র ১১ বছর বয়সে যোগ দেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে। আইরিশ অফিসার গডফ্রে বেকারের অধীনে কাজ করতে শুরু করেন। শিগগিরই পদোন্নতি। হন সুবেদার।
১৭৮২ সালে পদত্যাগ করে আয়ারল্যান্ড হয়ে লন্ডনে যান মাহমেদ। ব্রিটেনের মধ্যে এক টুকরো ভারতের ছোঁয়া আনতেই ওই রেস্তোরাঁ খোলেন মাহমেদ। ঠিকানা: ৩৪ জর্জ স্ট্রিট, পোর্টম্যান স্কোয়ার। ব্রিটিশ সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনও দিয়েছিলেন রেস্তোরাঁর।
চালু হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘দ্য হিন্দোস্তানি কফি হাউস’। অন্দরসজ্জা থেকে খাবার- সব কিছুতেই ভারতীয় ছাপ। বসার জন্য বেতের চেয়ার। দেওয়ালে দেওয়ালে টাঙানো ভারতের মনোরম দৃশ্যের পেন্টিং। হাতে লেখা মেন্যুতে গলদা চিংড়ি ও মুরগির কারি। আনারস পোলাও।
খাঁটি ভারতীয় ঘরানার আরও অনেক খাবার। ভারতীয় কেতায় তামাক সেবনের জন্য ভেতরে ছিল হুঁকা-ঘরও। বসে খাওয়াই শুধু নয়, এখান থেকে জিভে জল আনা সব খাবার যেত লন্ডনের ঘরে ঘরে। রেস্তোরাঁটির অন্যতম গ্রাহক ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিসার চার্লস স্টুয়ার্ট।
তিনি রোজ গঙ্গায় øান করতেন এবং ভারতীয় পোশাক পরতেন। খেতেন হুঁকা। পরিচিত ছিলেন হিন্দু স্টুয়ার্ট নামেও। গুজব ছিল, ১৬টি স্ত্রী ও হারেম ছিল তার। কিন্তু সাফল্যের শিখরে উঠলেও ক্রমে অবস্থা পড়তে শুরু করে রেস্তোরাঁটির। কারণ এটি চালানোর জন্য প্রয়োজন ছিল প্রচুর অর্থের।
এ ছাড়া পোর্টম্যান স্কোয়ারের অভিজাত ও ধনী নবাবরা নিজেদের বাড়ির রান্নার জন্য ওই রেস্তোরাঁর ভারতীয় ও একসময়ে ভারতে কাজ করেছেন এমন ইউরোপীয় বাবুর্চিদের কাজে রাখতে শুরু করেন। যার জেরে বিপাকে পড়ে মাহমেদের রেস্তোরাঁ।
অর্থকষ্টের মুখে ১৮১১ সালে সেটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন তিনি। ১৮১২ সালে সর্বস্বান্ত হন মাহমেদ। ১৮৩৩ সাল পর্যন্ত রেস্তোরাঁটি খোলা ছিল অন্য মালিকের অধীনে।
রেস্তোরাঁটি বেচে দিয়ে ব্রাইটনে চলে যান মাহমেদ। সেখানে চালু করেন একটি ‘বাথ হাউস’। সেটিও ছিল ভারতীয় নবাবি ঘরানার গোসলখানা। মাথার মালিশ থেকে সুগন্ধি-পরিচর্যা তথা অ্যারোমাথেরাপির ব্যবস্থা ছিল সেখানে। প্রিন্স অব ওয়েলস যেতে পছন্দ করতেন সেখানে।
সূত্র : আনন্দবাজার, হিন্দুস্তান টাইমস।