দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের প্রত্যন্ত একটি গ্রাম কোডিনহি। এ গ্রামে গেলে আপনি চমকে যাবেন। বর্তমানে এ গ্রাম বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেয়েছে ‘যমজদের গ্রাম’ হিসেবেই। বিজ্ঞানীরাও স্তম্ভিত এখানকার যমজদের ক্রমবর্ধমান জন্মহার দেখে!
গ্রামের রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ, স্কুল বা অফিস সর্বত্র জোড়ায় জোড়ায় মুখ দেখতে পাওয়া যায়। এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, তার স্কুলেই ১৭ জোড়া যমজ রয়েছে। আবার খেলার মাঠে যমজ খেলোয়াড়দের নিয়েও দর্শকরা মাঝে মাঝে বিভ্রান্তিতে পড়েন। ব্যাপারগুলো যেমন মজার তেমনই বিস্ময়কর।
সার্কাস বা পেশাদার থিয়েটার নয়, আসলে কেরালার মালাপ্পুরম জেলার কোডিনহি গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই রয়েছে যমজ ভাইবোন। গ্রামে ঢোকার আগেই সাইনবোর্ডে দেখতে পাবেন, ‘ঈশ্বরের একান্ত আপন যমজদের গ্রাম কোডিনহি।’ এখানে হাজারটি জন্মের মধ্যে ৪২টি জন্মই যমজ।
২০০৮ সালের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যাবে, এ গ্রামে জন্ম নিয়েছিল ২৬৪ যমজ শিশু, সংখ্যাটা বেড়ে এখন ৪৫০-এ দাঁড়িয়েছে। সারা বিশ্বে যমজ সন্তান প্রসবের যে হার, কেরালার এ গ্রামে সে হার প্রায় ছয় গুণ বেশি। গ্রামের ৮৫ শতাংশ মানুষ মুসলিম হলেও হিন্দুদের মধ্যেও যমজ সন্তান জন্মের হার একই রকম।
যমজ জন্মের এ আশ্চর্য ঘটনা বিশ্বে শুধু কোডিনহিতেই নয়, আরও দুটি গ্রামেও ঘটে। এ দুটো গ্রাম হল- নাইজেরিয়ার ইগবো ওরা ও ব্রাজিলের ক্যানডিডো গডোই। এ দুই গ্রামের যমজ সন্তান জন্মের ব্যাখ্যা অবশ্য পাওয়া গেছে।
অথচ তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে বিজ্ঞানীরা সঠিকভাবে কোডিনহির ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না। গ্রামটিতে যমজ শিশু জন্মের এ ধারা শুরু হয়েছিল ৬০-৭০ বছর আগে। যমজের সংখ্যা এরপর ক্রমেই বেড়েছে।
দেখা গেছে, বিয়ের পর কোনো নারী ওই গ্রামে এলে তিনিও যমজ সন্তান প্রসব করছেন। স্থানীয় চিকিৎসক শ্রীবিজু জানান, পাশ্চাত্যের মতো এ গ্রামে সন্তান জন্মের জন্য কোনো কৃত্রিম পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় না।
সাধারণত কম বয়সী নারীরাই প্রথমবারের মাতৃত্বে এমন যমজ সন্তানের অভিজ্ঞতা লাভ করছেন। গ্রামবাসী যমজ জন্মের এ ব্যাপারটিকে ঐশ্বরিক আশীর্বাদ বলে ধরে নিয়েছেন। গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক যমজরা এখনও বেঁচে আছেন।
কুনহি পাথুটি ও পাথুটি নামের সত্তর বছরের দুই বোনের দাবি- সবটাই ঈশ্বরের আশীর্বাদ। বিজ্ঞান কিছুই করে উঠতে পারবে না। তবে বিজ্ঞানীরা হাল ছাড়েননি। যমজ জন্মের নেপথ্যে জেনেটিক অর্থাৎ জিনগত নাকি আবহাওয়ার কারণ দায়ী সে বিষয়ে পরীক্ষা চলছে।
বিভিন্ন দেশ থেকে বিজ্ঞানীরা এ গ্রামে এসে যমজদের বিভিন্ন জৈবিক নমুনা সংগ্রহ করে চলেছেন। ২০০৬ সালে যমজদের সুরক্ষার জন্য সমিতিও গড়ে উঠেছে। সূত্র: ডয়েচে ভেলে।