পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে মজার মজার কতই না জাদুঘর। বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে এসব জাদুঘর যেমন বৈচিত্র্যময়, ঠিক তেমনি আমাদের চিন্তাভাবনার খোরাকও জোগায়।
ছোট্ট বয়সে আমাদের সবারই লেখার হাতেখড়ি হয় চক দিয়ে। একটু বড় হলেই হাতে তুলে দেয়া হয় কাঠপেনসিল। এই পেনসিল দিয়েই মূলত আমাদের হাতের লেখার মূল গড়ন তৈরি হয়।
কিন্তু জানেন কি এই পেনসিলের রয়েছে অত্যাশ্চর্য একটি জাদুঘর? শুনতে অবাক লাগলেও এমন মজার জাদুঘর গড়ে উঠেছে ইংল্যান্ডে।
উত্তর ইংল্যান্ডের কাম্বারল্যান্ডের কেসউইক গ্রামে অবস্থিত পেনসিল জাদুঘরটি। প্রতি বছর প্রায় ৮০ হাজারেরও বেশি দর্শক ঘুরতে আসেন এই পেনসিল জাদুঘরে। এ জাদুঘর তৈরির কাহিনীও বেশ মজার। পনেরো শতকের দিকে এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে কাম্বারল্যান্ডের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট সব ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। প্রচুর গাছপালা উপড়ে নষ্ট হয় রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি।
সে সময় উপড়ে পড়া গাছের গুঁড়ির মাটির নিচে এক অদ্ভুত কালো রঙের পদার্থ চোখে পড়ে সবার। এভাবেই প্রথম আবিষ্কার হয় গ্রাফাইট। যখন এলাকার অধিবাসীদের গোচরে আসে এটি ক্ষতিকারক নয়, কিন্তু ঘষলে কালো দাগ লেগে যায় তখন থেকেই শুরু হয়ে যায় এর ব্যবহার।
স্থানীয় রাখাল বালকেরা তাদের খামারের ভেড়া চিহ্নিত করার কাজে এই গ্রাফাইট ব্যবহার করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে সেই গ্রাফাইট থেকেই তৈরি হতে থাকে পেনসিল।
১৮৩২ সালে প্রথম পেনসিল তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর এই কারখানার বহুবার মালিকানা বদল হয়েছে। ১৮৫ বছরের সেই পেনসিল কারখানা টিকে আছে এখনও। কারখানাটিতে ছোটদের লেখার পেনসিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের রংপেনসিল তৈরি হয়ে আসছে বছরের পর বছর।
১৯৮১ সালে কাম্বারল্যান্ডের পেনসিল কারখানার তত্ত্বাবধানেই কেসউইক গ্রামে তৈরি হয় একটি পেনসিল জাদুঘর। কাম্বারল্যান্ডের পেনসিল কারখানার টেকনিক্যাল ম্যানেজার বারবারা ম্যুরে জাদুঘর তৈরির ধারণাটি দেন।
পরবর্তী সময়ে কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তার ধারণাতে সহমত পোষণ করে জাদুঘর তৈরির উদ্যোগ নেন। জাদুঘরটিতে রয়েছে ভিডিও থিয়েটার ও প্রদর্শনী, যেখানে দেখা যায় ১০০ বছরের পুরনো পেনসিল তৈরি ও প্যাকেজিং প্রণালী। তাছাড়া রয়েছে আরও প্রাচীন যন্ত্রপাতি, যা দিয়ে সে সময় কর্মীরা নিপুণভাবেই পেনসিল তৈরি করতেন।
জাদুঘরটি সম্পূর্ণ ঘুরে দেখানোর জন্য রয়েছে গাইডের সুব্যবস্থা। প্রথম পেনসিল তৈরি হয়েছিল কিছু গ্রাফাইটের কঞ্চিতে তার দিয়ে বেঁধে। পরে উদ্ভাবনী কৌশলে গ্রাফাইট পুরে দেয়া হয় কাঠের টুকরোর ভেতর।
বর্তমানে পেনসিলের পেছনে যে রাবার লাগানো থাকে তা সর্বপ্রথম তৈরি করেছিলেন জোসেফ রেচেলডর্ফার নামের এক ব্যক্তি। মিউজিয়ামটিতে রয়েছে ড্রয়িং জোন, যেখানে প্রতি সপ্তাহে নামিদামি শিল্পীদের আঁকার ওয়ার্কশপ আয়োজিত হয়ে থাকে। এমনকি ছাত্রদের শেখানোর জন্য আছে এডুকেশনাল ট্যুর। এই ট্যুরের খরচ মাত্র এক পাউন্ড।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এক ভয়াবহ বন্যায় জাদুঘরের মূল কাঠামোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর ২০১৭ সালের ১৫ জুন আবার চালু করা হয় এটি। জাদুঘরের টিকিট মূল্য সাড়ে তিন পাউন্ড। ছুটির দিন ছাড়া নয়টা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত প্রায় সারা বছরই খোলা থাকে।